মসজিদ হলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতিক৷ পবিত্র এই স্থানকে আমরা সম্মান দেখিয়ে আল্লাহর ঘর বলে থাকি অর্থাৎ পবিত্র ঘর। প্রতিদিন একজন মুসলিম মুয়াজ্জিনের আযানে সারা দিতে কম হলেও পাঁচবার মসজিদে উপস্থিতি হয়৷ যেখানে আযান হয়, ইকামত হয়, নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। তবে পবিত্রতার দিক দিয়ে পৃথিবীর সকল মসজিদের কেন্দ্র ভুমি মসজিদ আল-হারাম।
পৃথিবীতে তিনটি মসজিদ রয়েছে যার মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা দিয়েছেন এবং রাসূল (সা.) এর হাদিসেও তা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান দুই মসজিদ হারামাইন তথা মসজিদ আল-হারাম ও মসজিদে নববী, যা সৌদি-আরবে অবস্থিত। সাম্প্রতি এই মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মসজিদের মাইকে উচ্চভলিউমে যে আযান, ইকামত ও কুরআন তিলাওয়াত হয়ে থাকে তার মাত্রা তিনভাগের একভাগে নিয়ে আসতে হবে।
আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা, মসজিদে সৌদিআরবের নতুন বিধিনিষেধ কেন দেওয়া হয়েছে? ইসলামি শরিয়তে এটা কতটা যৌক্তিক? মসজিদে হারামাইনের মত স্থানে এই বিধিনিষেধ জারি করা কি ঠিক হয়েছে? এটা কি সৌদি-আরব প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্ত নয়? এসব বিষয় নিয়ে একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। চলুন তবে শুরু করা যাক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্যে আমরা জানতে পেরেছি সৌদি-আরবের কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের সকল মসজিদগুলোতে লাগানো লাউডস্পিকারের শব্দের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা- সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে অনড়।
সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় অর্থাৎ ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, সবধরনের লাউডস্পিকার বিশেষ করে মসজিদের মাইক সর্বোচ্চ যত জোরে বাজানো যায়, তার এক-তৃতীয়াংশ ভলিউমে মাইক বাজাতে হবে। মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ আল-শেখ বলেন, তারা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে আসা অভিযোগ আমলে নিয়েই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল মুসলিম দেশটিতে, সৌদি কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, সৌদি-আরবের সরকারি নির্দেশে মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। বিশেষ করে নামাজের পুরাপুরি খুতবা লাউডস্পিকারে প্রচার না করে, শুধু আযানের সময় স্পিকারের ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। তবে তাতেও ভলিউমের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সৌদি ধর্মমন্ত্রী আবদুল লতিফ আল-শেখ বলেন, তারা নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের নাগরিকদের অভিযোগ, মসজিদে মাইকের উচ্চশব্দের কারণে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদের ও রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। তাই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আর মন্ত্রীর দাবি এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ইসলামি শরিয়া সম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কিছুদিন আগে আমরা পত্রিকা ও গণমাধ্যমের সাহায্যে জেনেছি, মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক?
আমরা জানি ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন-বিধান। ইসলাম শব্দের মূল অর্থই হলো সালাম বা শান্তি। তাই অশান্তির কোন স্থান ইসলামে থাকতেই পারে না৷ আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে শব্দ। পরিবেশের আলো, তাপ, বিদ্যুৎ এবং চুম্বকের মতো শব্দও হলো এক প্রকার শক্তি।
বর্তমানে আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অল্প শব্দের তীব্রতাও অনেক বেশি বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাই যেখানে মানুষের সমাগম বেশি হয়। বিশেষ করে বর্তমানে সভা, সেমিনার ও মসজিদে সচরাচর মাইক বা উচ্চ ভলিউমের স্পিকার ব্যবহার করা হয়। তবে এই মাইক বা লাউডস্পিকারের যেমন রয়েছে কিছু উপকারি দিক, ঠিক তেমনি রয়েছে বেশ ক্ষতিকারক দিক৷
পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, যেকোনো স্থানের জন্য শব্দের মাত্রা দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত সহনীয়। অপর দিকে শয়নকক্ষের জন্য যা ২৫ ডেসিবেলের উপরে অনুমোদিত নয়। অফিস আদালতের জন্য ৩৫ থেকে ৪০ ডেসিবেল৷ আর হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত শব্দের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ ডেসিবেল।
যদিও মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। কিন্তু বর্তমানে আমরা অনায়াসে ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবেল শব্দের মাত্রা প্রতিনিয়তই সহ্য করে যাচ্ছি। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে ভয়ানক কথা, শব্দের মাত্রা ৭৫ ডেসিবেল কিংবা তার বেশি মাত্রার শব্দদূষণ হলে মানুষের আস্তে আস্তে শ্রবণশক্তি হারিয়ে যায়। আর প্রকৃতিক বজ্রপাতের মতো দু-একটি শব্দ ছাড়া শব্দদূষণের বেশির ভাগ কারণই মানব সৃষ্ট।
উচ্চ ভলিউমের বা তীব্রতাসম্পন্ন শব্দ মানব দেহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ফলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, শিরপীড়া, মানসিক অসুস্থতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, আলসার, বদহজম, আত্মহত্যার প্রবণতা, আক্রমণাত্মক মনোভাবের উদ্রেক, হৃদরোগসহ নানাবিধ জটিল ও মারাক্তক সবব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
এমনকি উচ্চস্বরে কথা বলার সময়ও শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। তাই ইসলাম শব্দদূষণে দিয়েছে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশনা। পবিত্র কুরআনে কারীমে শব্দের তীব্রতার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর উঁচু করো না এবং নিজেরা যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো তার সাথে সেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারণ, তাতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা তা টেরও পাবে না।” [সূরা-হুজুরাত আয়াত:০২ ]
“এ আয়াতটি হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত আবু মুলাইকা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, দুই মহান ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবূ বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.) যেন প্রায় ধ্বংসই হয়ে যাবেন, যেহেতু তাঁরা নবী (স.)-এর সামনে তাঁদের কণ্ঠস্বর উঁচু করেছিলেন, যখন বানী তামীম গোত্রের প্রতিনিধি হাযির হয়েছিলেন।
তাদের একজন হযরত হাবিস ইবনে আকরার (রা.) প্রতি ইঙ্গিত করেন এবং অপরজন ইঙ্গিত করেন অন্য একজনের প্রতি। তখন হযরত আবূ বকর (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে বলেনঃ “আপনি তো সব সময় আমার বিরোধিতাই করে থাকেন?” উত্তরে হযরত উমর (রা.) হযরত আবু বকর (রা.)-কে বলেনঃ “আপনার এটা ভুল ধারণা।”
এই ভাবে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হযরত ইবনে যুবায়ের (রা.) বলেনঃ “এরপর হযরত উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এতো নিম্নস্বরে কথা বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দ্বিতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করতে হতো।” এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেছেন।”[তাফসিরে ইবনে কাসীর ]
“হযরত আবু বকর (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর শপথ। এখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির মতো কথা বলব। হযরত উমর (রা.) এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যে, প্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞেস করতে হতো। হযরত সাবেত কায়েস (রা.) এর কণ্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উঁচু ছিল। এই আয়াত শুনে তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং কণ্ঠস্বর নিচু করে ফেললেন।” [তাফসিরে ইবনে কাসীর]
মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ কতটা যৌক্তিক তা বুঝার জন্য আমরা আরো কিছু হাদিস লক্ষ্য করতে পারি৷ যেমন- হযরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত-
“রাসূল (সা.) মসজিদে ইতেকাফ অবস্থায় ছিলেন, তখন সাহাবিদের উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ শুনতে পেয়ে তিনি নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা প্রত্যেকেই আল্লাহ তায়া’লার পরিবেশের অনুগত। সুতরাং একে অপরকে কষ্ট দেবে না এবং কুরআন পাঠ অথবা নামাজ পড়ার সময় একে অপর থেকে স্বরকে উঁচু করবে না।”[আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত]
এমনকি মসজিদে নববীর আশপাশে এলাকার কোনো বাড়ির দেয়ালে কেউ যদি কোনো পেরেক (লোহা) বা এ জাতীয় কিছু পোতার শব্দ যদি হুজরায় নববী পর্যন্ত পৌঁছাত, তখন সাথে সাথে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) কাউকে এ বলে পাঠাতেন যে, এভাবে পেরেক পোতার শব্দ দ্বারা যেন রাসূল (সা.) কে কষ্ট না দেয়া হয়।
এক সময় হযরত আলী (রা.) নিজের ঘরের কপাট বানাতে কাজ শুরু করলে তাকে বলা হয়েছিল যে, তিনি যেন বাইরে গিয়ে কপাট তৈরি করে আনেন। কপাট বানানোর শব্দ যেন মসজিদে নববীতে না আসে এবং এ শব্দের কারণে যেন রাসূল (সা.) কষ্ট না পান।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনাও চুপি চুপি করার জন্য পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।”[সূরা-আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]
হযরত উমর (রা.) দুই ব্যক্তিকে মসজিদে নববীতে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বললঃ আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মদীনাবাসী হতে তবে আমি তোমাদের বেত্ৰাঘাত করতাম। তোমরা রাসূলের মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছ কেন? [বুখারী: ৪৭০]
এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীল হযরত জাকারিয়া (আ.) এর দোয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন- “যখন সে তার পালন কর্তাকে অনুচ্চস্বরে ডাকল” [সূরা-মারইয়াম: ০৩]
অর্থাৎ অনুচ্চস্বরে দোয়া করা আল্লাহ তায়া’লার কাছে পছন্দের। কেননা তিনি তো বধির নন। তিনি হলেন সর্বস্রোতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এ পছন্দের মাধ্যমে আল্লাহ তায়া’লা মানব সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছেন শব্দদূষণ না করার ব্যাপারে।
উপরোক্ত হাদিস ও পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় মাসজিদে বা আল্লাহর ঘরে উচ্চভলিউমে শব্দ নিষিদ্ধ বা পছন্দনীয় নয়। অর্থাৎ এই আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে মানবজাতিকে সতর্ক করা হয়েছে শব্দদূষন সম্পর্কে।
এমনকি রাসূল (সা.) উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতেও নিষেধ করতেন। যেন আশেপাশে থাকা মানুষের ঘুমে প্রবলেম অথবা শিশুদের বা বৃদ্ধদের যেন কষ্ট না হয়। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। মসজিদের উচ্চ ভলিউমে আযান, ইকামত ও তিলাওয়াত হয়ে থাকে। যা মসজিদের বাইরেও উচ্চশব্দে পৌঁছে যায়। আর এর স্পেশাল কোন ফজিলতও নেই বরং নিষিদ্ধ।
নামাজে তিলাওয়াত মসজিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই বাহুল্য। কেননা উচ্চভলিউম আশেপাশে থাকা বৃদ্ধ, অসুস্থ কিন্বা শিশুদের ঘুমে সমস্যার সৃষ্টি করে। আর ইসলামে অন্যকে কষ্ট দিয়ে কোন নেক কাজ করার বৈধতা নেই।
মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ হলো, আযান, ইকামত ও তিলাওয়াতে উচ্চভলিউম ব্যবহার করা যাবে না। আমি এই বিধিনিষেধ অত্যন্ত যৌক্তিক ও যুগ উপযোগী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছি। অনেকে দাবি করে থাকেন তাহলে গান-বাজনা ও বিভিন্ন পার্টিতে বা অসামাজিক কনসার্টে কেন এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
মূলকথা হচ্ছে, এই কাজ ধর্ম-মন্ত্রনালয়ের উপর এতটা প্রভাব ফেলবে না। এর জন্য অন্যান্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় রয়েছে, তারা দায়ী থাকবে। তাই বলে মসজিদের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া তো ঠিক নয় বরং এটা অপছন্দনীয়।
আর একটা কথা চিন্তা করুন,আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে প্রতি রাস্তার মোরে বা অলিতে-গলিতে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। আর এসব প্রতিটা মসজিদে একাধিক মাইক লাগানো থাকে৷
আযানের সময় যখন প্রত্যেক সমজিদে সবাই একসাথে আযান দেয় তখন সবারটা একসাথে মিলে একটা মিশ্রশব্দের সৃষ্টি করে৷ ফলে ভালো করে বুঝাও যায় না, এমনকি আযানের উত্তর দিতেও প্রবলেমে পড়তে হয়।
দেখুন এভাবে কেন আমরা ভাবি না!! প্রতিটা মসজিদের একটি এরিয়া বা সীমা নির্ধারণ করে অল্প ভলিউমে আযান পৌঁছে দিলেই তো হল। অন্য মসজিদ তার এরিয়ায় যতটুকু ভলিউম প্রয়োজন সে অনুযায়ী ভলিউম সেট করে নিবে৷ তাহলে আযানের উচ্চশব্দের ফলে আশেপাশে রোগী, বৃদ্ধ কিন্বা শিশুদের ঘুমের কোন সমস্যার সৃষ্টি হবে না৷ কিন্তু আমাদের দেখলে মনে হয় যেন আমরা আরো বেশি জোরে আযান দেওয়ার প্রতিযোগিতা করছি। আরে ভাই, এখন তো হযরত বিল্লাল (রা.) মত খালি গলায় আযান দিতে হয় না যে, অনেক জোরে দিতে হবে। তখন তো আর মাইক ছিল না, তাই নয় কি?
ইসলাম অন্যকে কষ্ট দিয়ে কোন নেক কাজ কখনোই করতে বলেনি৷ বরং ইসলাম প্রতিটা বিষয়ে শান্তির সুবাস ও সৌন্দর্য ছড়িয়ে থাকে। আর একজন প্রকৃত মুসলিম তার নামাজের সময় সম্পর্কে কেনইবা গাফেল হবে?
তাই মসজিদে সৌদি-আরবের নতুন বিধিনিষেধ অত্যন্ত যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ। বরং এই সিদ্ধান্ত ইসলামি রক্ষণশীল দেশ সৌদি-আরবের আরো আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল। পবিত্র হারামাইনের মত পবিত্র মসজিদে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মত কাজ হওয়া তো কল্পনাতীত।
আর রাষ্ট্রের সকল সমস্যার সমাধান ও ইসলামি শরিয়তের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রধান দায়িত্ব। তাই মুসলিম উম্মাহর পবিত্র মিলনায়তন মসজিদ থেকেই পরিবর্তন ও সমাধানের প্রধান ধারা শুরু হওয়া উচিত। ইসলামের কোন কিছু যেন কারো কষ্টের কারণ না হয়, সে ব্যপারে ইসলামি শরিয়ত নিশ্চয়ই সর্বদা ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুক, আমিন৷
মন্তব্য লিখুন