লাল গ্রহ মঙ্গল নিয়ে আমাদের আগ্রহের সীমা নেই। অনেকের মতে মঙ্গলেই নাকি হতে চলেছে মানুষের দ্বিতীয় আবাসস্থল। তাই এই গ্রহ নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে চলেছেন। ইতিমধ্যে প্রতিবছর অনেক মহাকাশযান পাঠানো হচ্ছে এই লক্ষ্যে। সাথে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা তো রয়েইছে। কিন্তু তাই বলে মঙ্গলের জমি কেনা? তাও একজন বাঙ্গালির! হ্যাঁ, এমনই একজন সাধারণ বাঙালির অসাধারণ স্বপ্ন সফলের গল্পই চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মঙ্গলের জমি কেনা কে এই বাঙালি?
মঙ্গলের জমি কিনেছেন বলে দাবী করে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিডিয়ায় বেশ হইচই ফেলে দেন ভারতের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের বাসিন্দা শৌনক দাস। পেশায় তিনি একজন বেসরকারি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা।
জমির জন্য মাত্র ৩০০০ ভারতীয় রুপী আর দলিলের জন্য আরো অল্প কিছু অর্থ খরচ করেই নাকি তিনি হয়ে গেছেন মঙ্গল গ্রহের পুরো ১ একর জমির মালিক! শুধু তাই নয়, তিনি এই জমির বৈধ কাগজপত্রও পেয়ে গেছেন বলে দাবী করেন। ঘটনা সত্যি হলে তিনিই যে হবেন বাঙালি হিসেবে প্রথম মঙ্গলগ্রহে জমির মালিক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
জানা যায়, প্রথম থেকেই শৌনক দাস ছিলেন মহাকাশ বিষয়ে প্রচন্ড আগ্রহী। অনেক সময়ে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি বা নায়ক, নায়িকাদের এরকম ভিনগ্রহে জায়গা কেনার খবর শুনলেও নিজে যে একদিন এরকম কিছু করে ফেলবেন তা স্বপ্নেও তিনি ভাবেননি। একদিন হঠাৎই এরকম একটা ওয়েবসাইটের খোঁজ পেয়ে যান। এরপর এ বিষয়ে তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং খোঁজ খবর নিয়ে যখন দেখেন দাম একদম হাতের নাগালের মধ্যেই তখন আর দেরি না করে পুরো এক একর জমির জন্যই বুকিং দিয়ে দেন।
এছাড়া আরো জানা যায়, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে এই জমি তিনি তার স্ত্রীকে উপহার দেন এবং তাদের একমাত্র সদ্যোজাত কন্যা সন্তানেরও নাম রাখেন ‘মার্স’। আরো একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, মঙ্গলে যদি বসতি স্থাপন করা যায় তাহলে শৌনকের প্রতিবেশি হবেন হলিউডের টম ক্রুজ। কারন, আইনত ওনার পাশের জমিটাই হলো অভিনেতা টম ক্রুজের!
মঙ্গলে জমি কেনার প্রক্রিয়া
জানা যায়, আমেরিকার একটি বিশেষ রিয়েল এস্টেট সংস্থা মঙ্গলের জমি বিক্রি করে থাকে। তবে তারা শুধু মঙ্গলেরই নয়, চাঁদের জমিও বিক্রি করে থাকেন, এবং এটিকে শতভাগ বৈ্ধ বলেও দাবী করেন। জমি ক্রয়ের কিছু দিনের মধ্যেই সংস্থাটি জমির দলিল ও গ্রহের ঠিক কোথায় তার জমির অবস্থান তার ছবি সম্বলিত কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয় বলে জানা যায়। এখান থেকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের লক্ষ্যাধিক মানুষ নিজেদের এই অদ্ভুত খেয়াল পূরণ করেছেন, যার মধ্যে আছেন কিং খান খ্যাত শাহরুখ খান এবং আরো ছিলেন প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতও।
আরও পড়ুনঃ
শ্বেত গহ্বর বা হোয়াইট হোল কি? এটি কি শুধুই তাত্ত্বিক?
অলিম্পাস মন্স: মঙ্গলের বৃহৎ আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জানুন
সংস্থাটির পক্ষ থেকে মান ভেদে বিভিন্ন রকম দামের জমি বিক্রয় করা হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতা তার সামর্থ্য অনুযায়ী জমি পছন্দ করতে পারেন। তবে এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে ভবিষ্যতে কোনো জায়গা গবেষণার কাজে ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয় হলে অনতিবিলম্বে সেটিকে ছেড়ে দিতে হবে, জমি কেনার আগে এই মর্মে শর্ত প্রদান করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও ২০২১ সালের প্রথম দিকে নাসা থেকে মঙ্গল গ্রহের ওপর একটি অভিযান পরিচালনা করা হয় যেখানে মঙ্গল যাত্রায় ব্যবহৃত নভোযানে্র ভেতর একটি মাইক্রোচিপ রাখা ছিল। এতে ছিল মঙ্গলের সকল জমির মালিকদের নাম। বলাইবাহুল্য যে তাতে বাঙালি শৌনক দাসের নামটিও ছিল।
এত কিছুর পরেও অনেকেই প্রশ্ন রাখেন পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহের জমি কিভাবে কোনো সংস্থা বিক্রি করার অধিকার রাখে? আর কারাই বা তাদের এই অধিকার দেয়? অনেকের মতে এটা শুধুই বুজরুকি। এ সন্দেহ অবশ্য একেবারেই অমূলক কিছু নয়। তাছাড়া, যেস্থানে এই জীবনে যাওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই তুচ্ছ, সেখানে জমি কেনা অনেকের মতে নিতান্ত অমূলক চিন্তা ও শুধুই অর্থের অপচয়। পাশাপাশি এধরনের অনেক বিদেশি ভুয়া ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে এধরনের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে। তবে, এত কিছুর পরেও শৌখিন মানুষদেরকে তাদের শখ থেকে দূরে আনা এতো সহজ নয়।
কবে হবে মঙ্গলযাত্রা?
এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন রোবট, মহাকাশযান পাঠানোর মধ্যেই মানুষের মঙ্গলযাত্রা সীমিত রয়েছে। মঙ্গলগ্রহে মানুষসহ মহাকাশযান প্রেরন করা এখনো বেশ কঠিন ব্যাপার, তাই সেখানে মানব বসতি গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে আরো অনেক কঠিন। তবে এক্ষেত্রে নাসা এবং আরো বেশ কিছু দেশের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান অনেকটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা গড়ে তুলেছে বলা যায়। যার ফলে মঙ্গলে মানবযাত্রা হয়তো ধারণার থেকে আরো পূর্বেই সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে নাসার পাশাপাশি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং দেশ হিসেবে রাশিয়া ও চীন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। প্রায় সব সংস্থাগুলোই ২০৫০ এর আগে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও নিশ্চিত ভাবে কোনো সময় তারা এখনো ঘোষণা করতে পারে নি।
তবে যত যাই হোক, মঙ্গলে মানুষের পদচিন্হ আঁকা আর মানব বসতি স্থাপন করা কিন্তু এক কথা নয়। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। তবে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে নভোচারীদের একটি কলোনি গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাদের আছে। আর তাতে হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না। অদূর ভবিষ্যতে ‘স্পেস এক্স’এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো মহাকাশে বানিজ্যিক ভ্রমনের দ্বারও খুলে দেবে। কিন্তু তারপরও মঙ্গলের জমি যারা কিনেছেন তারা তাতে বাড়ি করে কবে বসবাস শুরু করবেন, সে চিন্তা আপাতত না করলেও চলছে।
শেষ কথা
চাঁদ বা মঙ্গলের জমি কেনার ব্যাপারটা এখন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথেষ্ট আলোচিত। অনেকেই এই পুরো প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। আবার অনেকের কাছে এটি অনেকটা স্বপ্ন পূরণের মতো। তবে যতো যাই হোক ইতিমধ্যেই শখের বশে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি এপথে পা বাড়িয়েছেন। আর এতটুকু টাকা খরচ করে বাংলার সাধারণ ঘরের একজন ছেলে যেভাবে আমাদের চায়ের কাপে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন তাই বা কম কিসে!