মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচন নিয়ে কমবেশি জানার আগ্রহ সবার রয়েছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ডেমােক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন । জো বাইডেন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও নির্বাচনী প্রচারাভিযান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তো চলুন শুরু করা যাক-
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
বাইডেন জন্মগ্রহন করেন ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। তিনি বেড়ে ওঠেন ক্র্যানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে। চার ভাইবােনের মধ্যে তিনি সবার বড় । তার বাবা হলেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র এবং মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তার মা আইরিশ বংশােদ্ভূত।
বাইডেন পড়াশোনা করেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর। পরে তিনি আইনের উপর ডিগ্রি নেন সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে।
বাইডেন সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ১৯৬৬ সালের বিয়ে করেন নিলিয়া হান্টারকে। তাদের ঘরে জন্ম নিয়েছে তিন সন্তান জোসেফ আর বিউ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। স্ত্রী নিলিয়া ১৯৭২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে তিনি জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান।
জো বাইডেন প্রথম কোন রােমান ক্যাথলিক বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ব্যক্তি । আর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত কোন রােমান ক্যাথলিক। জন এফ কেনেডি ছিলেন তার আগে প্রথম রােমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট।
বাইডেন ১৯৬৯ সালে অ্যাটর্নি হন, ১৯৭০ সালে তিনি কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মত বাইডেন সিনেটে নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম কনিষ্ঠতম সিনেটর। ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সবগুলোতে সিনেটর হিসেবে বাইডেন নির্বাচিত হন।
বাইডেন ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমােক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বারাক ওবামার সাথে সে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি এর পূর্বে ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্য থেকে সিনিয়র সিনেটর নির্বাচিত হন। জয়ের এই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাইডেন ডেমােক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডােনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেন।
২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম বাইডেনকে ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে। এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলে বাইডেন ভিন্ন ও বিপরীতার্থক উত্তর প্রদান করতেন এবং বলতেন, “কখনােই না বলবেন না“। একবার বলেন তিনি পুনরায় নির্বাচন করবেন এমন সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
কিন্তু কিছুদিন পর তিনি বলেন, “আমি যদি হাটতে পারি তাহলে নির্বাচন করবাে।” ২০১৮ সালের জানুয়ারি নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ চেয়ে ‘টাইম ফর বাইডেন’ নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি কমিটি গঠন করা হয়।
একঃ ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অমুনাফাভােগী বাইডেন ক্যানসার ইনিশিয়েটিভ ভবিষ্যতের জন্য তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে রাখার ঘােষণা দেয়।
প্রেসিডেন্ট প্রচারাভিযানের পূর্বে নৈতিক পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বাইডেন ও তার স্ত্রী এপ্রিলে এই ইনিশিয়েটিভ বাের্ডের সদস্য পদ ত্যাগ করে।
দুইঃ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, প্রসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভুদিমির জেলেনস্কিকে বাইডেন ও তার পুত্র হান্টার বাইডেনের অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
কিন্তু ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ অভিযােগ সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অপকর্মের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যম এই কাজের তদন্তের জন্য চাপ দেওয়াকে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ের সুযােগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করে।
যার ফলে একটি রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয় এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রেসিডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে।
তিনঃ ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট ২০২০-এর ডেমােক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে বাইডেন দাপ্তরিকভাবে ২০২০-এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ডেমােক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনােনীত হন।
২০ আগস্ট ৭০ জন সাবেক রিপাবলিকান সিনিয়র জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা “ট্রাম্প জাতীয় সংকটকালে নেতৃত্ব দিতে অনুপযুক্ত ছিলেন” এই মর্মে জো বাইডেন -কে ভােট দেওয়ার ঘােষণা দেওয়া হয় ।
তবে সর্বোচ্চ ভােটারপ্রিয় প্রার্থী ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডেমােক্র্যাটিক প্রার্থী বারাক ওবামা ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫শ’র বেশী ভােট পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী ভােটারপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন।
চারঃ এবারের ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে একই দলের প্রার্থী জো বাইডেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশী ভােট পেয়ে সর্বোচ্চ ভােটারপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে শূন্য ভােট পাওয়ার রেকর্ড থাকলেও এখন পর্যন্ত এত বেশি ভােট পেয়ে কোনাে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায়, ১৭৮৮ সাল এবং ১৭৯২ সালের উভয় নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ও পপুলার, উভয় ভােটেই নির্দলীয় প্রার্থী জর্জ ওয়াশিংটনের শতভাগ ভােটপ্রাপ্তিই একমাত্র বিরল ঘটনা। পরবর্তীতে কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কোন ভােটে কোন পদ্ধতিতেই শতভাগ ভােট পাননি।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ডেমােক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন । বিবিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, তিনি ৩০৬ টি ইলেকটোরাল ভােট পেয়েছেন। অর্থাৎ তিনি জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
যদিও তা নির্ভর করবে আইনগত চ্যালেঞ্জের ফলাফলের ওপর। ভােটের ফলাফলের হিসাবে পেনসিলভেনিয়ায় জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘােষণা করা হয়েছে।
পেনসিলভেনিয়ায় জেতার মাধ্যমে বাইডেন সেখানকার ২০টি ইলেকটোরাল ভােট পান । এর ফলে জয়ের জন্য প্রয়ােজনীয় ২৭০টি ভােট তিনি ছাড়িয়ে যান। তবে অন্য অঙ্গরাজ্য গুলো জর্জিয়া, অ্যারিজোনা এবং নেভাডাতেও বাইডেন জয় লাভ করেন ।
ফলে তার জয়ের জন্য প্রয়ােজনীয় ইলেকটোরাল ভােটের চেয়ে আরাে বেশি ভােট অর্জন করেন। সর্বশেষ জো বাইডেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভােট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করেন। তবে এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতো বেশি ইলেকটোরাল ভোট পাননি।
জো বাইডেন এর বিজয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির বিএলএম প্লাজায় উল্লসিত জনগণ ‘ঈশ্বরকে প্রশংসা, ডােনাল্ড ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন বলে গান গাইতে দেখা যায়।
সূত্র : বিবিসি, নয়াদিগন্ত এবং উইকিপিডিয়া
মন্তব্য লিখুন