ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নতুন কোন ইস্যু নয়। যুগের পর যুগ ধরেই তা অব্যহত রয়েছে। ইসরায়েল নামে কোন ভূখন্ড কখনোই ইহুদী জাতির জন্মভূমি ছিল না। ইহুদী জাতিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাতি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী নিধনকরা হলে ইহুদীরা দলে দলে ইউরোপ ত্যাগ করতে থাকে। তখন তারা ফিলিস্তিন ভূখন্ডে এসে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের কাছে আশ্রায় প্রার্থনা করে৷ ইহুদীরা সেখানে কৃষি কাজ করে যাযাবরদের মত বাসবাস করবে এমনটিই কথা ছিল৷
কিন্তু ইহুদীদের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যেহেতু ফিলিস্তিন বিট্রিশরা দখল করে নিয়েছিল৷ ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন ত্যাগ করে কৌশলে ইহুদীদের সেখানে প্রেরন করতে থাকে৷ আর ফিলিস্তিনি আরব জাতির কাছে ইহুদীদের একটি ভূখন্ড গড়ার পরিকল্পনার নীলনকশা করতে থাকে৷
এরপরই তারা কৌশলে নিরস্ত্র ফিলিস্তানি আরবদের সাথে ইহুদীদের অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং ফিলিস্তিন তাদের বেশ কিছু ভূখন্ড হারায়৷ আজ সেই হারানো ভূখন্ডই ইসরায়েল নামক একটি দেশ হিসেবে বলে থাকে।
ইতিহাসের কাঠগড়ায় ইহুদী জাতি:
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা সংকটের মূল হোতা বুঝতে হলে আগে ইহুদিদের সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা প্রয়োজন। যদিও ইতিহাসের পাতায় আরো বিস্তৃর্ণ বর্ণনা রয়েছে, আমরা সামান্য কিছু ইহুদী বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি৷
মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন মানুষের হেদায়েতের জন্য। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি ছিল না যাদের কাছে আল্লাহ নবী বা রাসূল প্রেরণ করেননি। তাই দেখতে পাবেন, পৃথিবীর প্রায় সব জাতির মানুষেরা কোন না কোন ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখে ও পালন করে৷
সকল নবী ও রাসূলের দাওয়াত কিন্তু ছিল একই ও অভিন্ন তাওহীদ। বরং মানুষেরা তাদের নবী ও রাসূলের মৃতুর পর ধর্মকে বিকৃত করে নিজেদের মনমত বানিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু ইহুদী জাতি এমন একটি জাতি যাদের পূর্বে বনি ইসরাইল বলে অবহিত করা হতো। পবিত্র কুরআনের পরতে পরতে তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ‘হে বনী ইসরাইল…’ এভাবে সম্বোধনে শুরু হয়ে। আল্লাহ আমাদের তাদের বিভিন্ন ধরনের পাপ, অসৎ কর্মের জন্য তিরস্কার ও সতর্ক করা হয়েছে।
এখন বিষয়টি খুবই বিস্ময় ও চিন্তা করার মত লাগছে৷ কেনইবা এই বনী ইসরাইলীদের প্রতি আল্লাহ তায়া’লা এতো তিরস্কার ও সতর্কতা উল্লেখ করেছেন এবং কেনই বা তিনি তাদের উপর এতো অসন্তুষ্ট!
প্রকৃতপক্ষে, বনী ইসরাইল বলা হয় হযরত ইয়াকুব (আ.) এর বংশধর বা জাতিদের। যারা বর্তমানে ইহুদী পরিচয় দিয়ে থাকে। ইতিহাসের সূচনা থেকেই বিভিন্ন সময়ে তারা আল্লাহর আদেশ ও সন্তুষ্টির বিপরীত কাজকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তাদেরকে বারবার সতর্কতা প্রদান করা সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টির বিপরীত তারা কাজ করার অনুশীলন থেকে কখনোই বিরত থাকেনি।
এছাড়া অন্যায় ভাবে নবীদের হত্যা করা সহ, তাদের নিকট প্রেরিত আল্লাহর রাসূলদের উপর তারা চরম নির্যাতন চালাত। মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হয়ে আমরা যেন তাদেরকে অনুসরণ না করি, সে জন্যই আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে বার বার বনী ইসরাইলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।
হযরত মুসা (আ.) এর সময়ে একবার ঘটনাচক্রে মহান আল্লাহ বনী ইসরাইলদের একটি গরু কুরবানী দেওয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল মুসা (আ.) তাদেরকে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী গরু কুরবানী করতে বললেন।
স্বাভাবিকভাবেই তাদের উচিত ছিল আল্লাহর আদেশের কাছে মাথানত করা এবং কোন প্রকার অহেতুক প্রশ্ন ও মন্তব্য না করে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া।
কিন্তু মুসা (আ.) যখন তাদের আল্লাহর আদেশের কথা জানালেন, তারা আল্লাহর এই আদেশ বাস্তবায়নের অনাগ্রহ করে এবং হযরত মুসা (আ.) কে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করা শুরু করে। মূলত আল্লাহর এই আদেশ বাস্তবায়ন করার কোন ইচ্ছাই তাদের মধ্যে ছিলনা।
তাফসীর ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে,
“কুরবানী করার জন্য গাভী সম্পর্কে এত বিবরণ গ্রহণ করা সত্ত্বেও ইহুদীদের গাভী কুরবানী করার কোন প্রকার ইচ্ছা ছিলনা। কুরআনের এই অংশে ইহুদীদের তাদের আচরনের জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। কেননা তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের অহেতুক একগুয়েঁমি ও অবাধ্যতাকে বজায় রাখা এবং একারণেই তারা গাভী কুরবানী করতে বিরত থাকার প্রয়াস চালিয়েছিলো।”
এভাবেই ইহুদী জাতিরা তাঁদের নবী মুসা (সা.) এর উপর নাজিলকৃত কিতাব ‘তাওরাত’ বিকৃত করে ফেলেছিল তাঁর মৃত্যুর পর। নিজেদের মনগড়া কথা ও কর্মপন্থা যুক্ত করে তারা আল্লাহর কিতাবকে অসম্মান করেছে। তাদের আমোদ প্রমোদ ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের উপর তারা যুগের পর যুগ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের সার্থ হাসিল করেছিল।
শুধু তাই নয় এই ইহুদী জাতিরা আল্লাহ অসংখ্য নবী ও রাসূলদের প্রতি নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের কাছে পাঠানো প্রায় ৭০ হাজার পয়গম্বরদের তারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। এই ইহুদী জাতিরাই পৃথিবীতে প্রথম সুদ-ঘুষের মত জঘন্য পাপের সুচনা করেছিল। ধনী ও গরিবের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি, বিচারে ধনীদের অগ্রাধিকার দেওয়া ও গরীরদের তুচ্ছ করাই ছিল তাদের কাজ। তারা হযরত মরিয়ম (আ.) ও ঈসা (আ.) এর উপর মিথ্যা জগন্য অপবাদ দিয়েছিল।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে মেরে ফেলার জন্য তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। এমনকি রাসূল (সা.) এর মৃত্যু পর তাঁর লাশ পর্যন্ত চুরি করার চেষ্টা করেছিল এই অভিশপ্ত ইহুদীরা।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর তায়া’লা সূরা ফাতিহার শেষ অংশে তাদের কে ‘মাগদুব’ (অভিশপ্ত) বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ‘মাগদুব’ বলতে যে এখানে ইয়াহুদীদের বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমত।
জেরুজালেমের গুরুত্ব:
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা সংকটের অন্যতম প্রধান করন হল জেরুজালেমে ভূখন্ড। যদিও ঐতিহাসিক ভাবে জেরুজালেম তিন ধর্মের মানুষের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অসংখ্য নবী ও রাসূলদের জন্ম ও আগমন হয়েছিল। হযরত ঈসা (আ.) এর পবিত্র জন্মভুমি এখানেই।
মুসলমানদের কাছে এই ভুমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র মসজিদ আল-আকসার জন্য৷ মুসলিমজাতির প্রথম কিবলা ছিল এই আল-আকসা মসজিদ৷ যা বাইতুল মাকদিস নামেই বেশি পরিচিত ছিল৷ কিন্তু পবিত্র কুরআন বায়তুল মাকদিসকে আল-আকসা বলে অবহিত করা হয়েছে।
যেমনটি আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় ত্ৰমণ করালেন, আল-মসজিদুল হারাম, আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাতে পারি, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”( সূরা ইসরা :১-৪)
মহান আল্লাহর তায়া’লা এখানে রাসূল (সা.) এর মিরাজ বা ইসরা এর ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে আল-আকসা মসজিদের কথা বলেছেন। এখানেই রাসূল (সা.) মক্কা থেকে আল-আকসায় মিরাজের প্রথম অংশ ইসরা সম্পন্ন করেন। রাসূল (সা.) বায়তুল মাকদিসে তখন সমস্ত নবীদের রূহের সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর ইমামতিতে সমস্ত নবীদের নিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করেন৷ তাই মসজিদ আল-আকসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত স্থান মুসলিম জাতির কাছে৷
কিন্তু ইহুদী জাতিরা এই মসজিদ আজ দখল করে রাখার চেষ্টা করছে৷ মুসলমানদের ঠিকভাবে সেখানে নামাজও পড়তে দেয় না৷ মাসের পর মাস মাসজিদে তালা ঝুলে থাকে৷ বিশ্বের প্রত্যেক মুসলিম ও ফিলিস্তিনের যা খুবই কষ্টের-বেদনার। এ কারনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারন করেছে৷
মসজিদুল আকসায় নামাজ পড়ার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। পৃথিবীর প্রথম মাসজিদ হল মসজিদুল হারাম এবং দ্বিতীয় মসজিদ হল বায়তুল মাকদিস(আল-আকসা)। মুসলিম জাতির প্রাচীন ঐতিহ্যের দিক থেকেও বায়তুল মাকদিসের গরুত্ব অপরিসীম।
আবু জর গিফারি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
“আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। অতঃপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান।”(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৫)
মসজিদ আল্লাহ তায়া’লার ঘর ইবাদতের শ্রেষ্ঠ জায়গা৷ কিন্তু সেই অধিকারটুকু পর্যন্ত আজ আমরা পাচ্ছি না। মুসলমানদের এতো গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ আজ ইহুদিদের দখলে৷ আল্লাহর রাসূল (সা.) এমন তিনটি মসজিদের নাম উল্লেখ করেছেন, যা উদ্দেশ্যে সফর করাও সওয়াবের।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন-
- “তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যকোনো মসজিদে বিশেষ সওয়াবের উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ করো না। আর সে তিনটি মসজিদ হলো— মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১১৫)
- অন্য হাদিসে এসেছে, “মসজিদুল আকসায় ১ রাকাত নামাজ আদায় অন্যান্য মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ, মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুন নববী ব্যতীত।”( বুখারি, মুসলিম)
মসজিদ আল-আকসার গুরুত্ব বর্ণনা ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। এখানে সংক্ষিপ্ত কিছু উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। অথচ আজ মসজিদ আল-আকসা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা সংকটের অন্যতম প্রধান কারন। ফিলিস্তিনের হাজার হাজার মুসলিম প্রতিদিন যুদ্ধে ময়দানে রক্ত দিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাত্র তাদের ন্যাজ্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব, বিশ্ব কেন চুপ?
বর্তমান বিশ্ব আজ মুহাম্মদ (সা.) এর ভবিষ্যৎ বানীর প্রমান দিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা আজ একতা হারিয়েছে। অত্যাচারিত-নির্যাতিত হচ্ছে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। একদিকে ভোগবিলাসিতায় মুসলিমরা পশ্চিমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, অন্য দিকে তাঁরই ভাইয়েরা না খেতে পেয়ে ক্ষুধার জালায় মৃত।
মুসলমানদের কাছে কি দেয়নি আল্লাহ তায়া’লা! ক্ষমতা, সম্পদ, প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আজ মুসলিমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও নির্যাতিত। একদিন এই মুসলিমরা বিশ্ব শাসন করেছিল। আজ বিশ্ব ও মুসলিমদের অন্যরা শোষন করছে। ইমান ও ধর্মের প্রতি মুসলিম শাষকরা দূর্বল হয়ে আধুনিক ভোগবিলাসীতায় যখন মগ্ন হয়ে পরেছে, তাদের পতন সেখান থেকেই শুরু হয়েছে।
আজ সৌদি আরব, আবুধাবি, কুয়েত এতো সম্পদশালী অথচ আমেরিকার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলতে সাহস পায় না। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা সংকটে নিরব ভুমিকায় তাদের দাসত্ব প্রমানিত।
সৌদি আরব আজ সবচেয়ে বেশি অর্থ অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় করে থাকে। কিন্তু সেই অস্ত্র শত্রুর বুকে তোলার মত শক্তি খুঁজে পায় না। কেননা তারা কাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলবে? আমেরিকা-ইসরায়েল?। তারাই তো আজ সৌদি ও আরব দেশের অস্ত্রের কারিগর।
একদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা সংকটের রেশ ধরে ইহুদীরা ফিলিস্তিনিদের নির্মম ভাবে হত্যা করছে৷ ছোট্ট ছোট্ট শিশু যাদের এখন পুতুল নিয়ে ঘরে বসে খেলা করার কথা, তারা আজ বোমা ও বুলেটের রোষানলে পাখির মত শিকার৷
ঈদের দিন যে শিশুরা নতুন পোশাক পড়ে ঘুরে-খেলে বেড়াবে বাড়ির উঠানের আঙিনায়। অথচ সেইদিন শতশত মুসলিম পিতা-মাতা ও ছোট্ট অবুজ শিশুর গায়ে কাফনের কাপড় পড়তে হচ্ছে।
আর আমাদের ভন্ড আরব রাজেরা সেদিন আনন্দ বিলাসিতায় নারী নিয়ে ফুর্তি করছে৷ কেউবা ইসরায়েলের সাথে নিজদের সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করছে৷ হায়রে মুসলমান শাসক কি জবাব দিবেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে?
আজ বিশ্ব দেখেছে যাদের কিছু করার কথা ছিল। যারা অস্ত্রের বলে কথিত জাতিসংঘ পরিচালনা করছে। তারা উল্টো নিরিহ ফিলিস্তিনদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী বলে আক্ষায়িত করেছে এবং দখলদার ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর আমাদের মুসলিম বিশ্বের ওআইসিই বা কি করেছেন?
বিশ্ব নেতাদের এই নিরবতা আজ মানবতা ও ইসলামকে তারা লজ্জিত করেছে। আমি একজন মুসলিম অথচ আমার ভাইয়ের বিপদে তার ঢাল হতে কেন পারিনি? এর চেয়ে দূর্বলতা ও অন্যের দাসত্বের প্রমান আর কি হতে পারে?
ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার ঘন্টা:
যুগের পর যুগ নিরীহ ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীনতার সপ্ন দেখেছে। যত দিন যাচ্ছে তাদের স্বাধীনতার প্রতিক বা ঘন্টা ততটাই নিকটবর্তী হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ। রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎ বানী অনুযায়ী ইমাম মাহদী অতী শীগ্রই আসছেন। মুসলিম জাতি আবার বিশ্ব শাসন করবে, ধংস হয়ে যাবে ইহুদীদের দল।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব এবার বিশ্ববাসীর হৃদয়ে চরম ভাবে আঘাত হেনেছে। দীর্ঘ এগার দিনের নিশংস হামলায় ৩০০ অধিক ফিলিস্তিনি মুসলিম নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্দোলনের কারনে ইসারায়েল কিছু দিনের জন্য অস্ত্র বিরতির করেছে। মূলত এটি একটি তাদের কৌশল। এই বিরতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনির বিজয় হয়েছে এমনটি ভাবা কখনোই সম্ভব নয়।
ইতিহাসে ইহুদীদের সাথে এভাবে বহু সমঝোতা হয়েছে, আর ইহুদীরা তা অত্যন্ত জগন্য ভাবে লঙ্ঘন করেছে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হবে না৷ বরং কয়েকদিনের মধ্যে ইসরায়েলের নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হবে। ইহুদী জাতি সবসময়ই মুসলিমের শত্রু এবং শত্রু রূপেই তাদের আবির্ভাব হবে। মহান আল্লাহর তায়া’লা আরো বলেন-
“তুমি মানবমন্ডলীর মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলিমদের সাথে অধিক শক্রতা পোষণকারী পাবে।”(সূরা মায়েদাহ: ৮২)
মহান আল্লাহর এ চিরন্তন বাণীর বাস্তবতা আজ চরমভাবে উপলব্ধি করছে মুসলিম বিশ্ব। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ।
আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের বর্বর ও পৈশাচিক সব কর্মকাণ্ডে অন্ধ ও নির্লজ্জের মত সমর্থন জানিয়ে মুশরিকদের দল। ইসরায়েল কোন রাষ্ট্র নয়। এটি ইহুদী জাতি কোন জন্মভুমি নয়। এই ভুমিতে ফিলিস্তিনের অধিকার একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। আর এই স্বাধীনতা একমাত্র ইমাম মাহদী আসা পর্যন্ত অপেক্ষার।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ ফিলিস্তিনকে পূর্ণস্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। আর ফিলিস্তিনির এই পূর্ণস্বাধীনতা অর্জিত হবে একমাত্র ইসরায়েলে রাষ্ট্রের বিলুপ্তির মাধ্যমে। তাহলে সমাধানের পথ রইল একমাত্র যুদ্ধ করা। আর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চুড়ান্ত যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে পৃথিবীকে। এর বিকল্প কিছু শান্তির পথ অন্তত ইসরায়েল ভেবে দেখবে না।
ইয়া আল্লাহ, তুমি অভিশপ্ত ইহুদীদের বিষচক্ষু হতে নিরীহ মুসলিমদের এবং আল-আকসা হেফাজত করুন, আমিন।